ঐকিক নিয়ম কাকে বলে?
ঐকিক নিয়ম, বা Unitary Method, গণিতের একটি মৌলিক নিয়ম যা সাধারণত একক ভিত্তিক হিসাবের মাধ্যমে সমাধান নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। “ঐকিক” শব্দটি এসেছে “একক” শব্দ থেকে, যার অর্থ এককভাবে নির্ণয় করা। ঐকিক নিয়মের মাধ্যমে প্রদত্ত কোনো বড় পরিমাণের মূল্যের উপর ভিত্তি করে একক মূল্য নির্ধারণ করা হয়, এবং সেই একক মূল্যের মাধ্যমে অন্য যেকোনো পরিমাণের মূল্য সহজে নির্ণয় করা যায়। এটি দৈনন্দিন জীবনে নানা হিসাব-নিকাশে যেমন খরচ, সময়, শ্রম, কিংবা দূরত্ব নির্ধারণে খুবই কার্যকরী।
ঐকিক নিয়মের ব্যবহার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ঐকিক নিয়মের মূল গুরুত্ব হলো এটি দ্রুত এবং সঠিক সমাধান প্রদান করতে সহায়ক। দৈনন্দিন জীবনের দরকষাকষি থেকে শুরু করে বড় বড় গণিতের সমস্যায়ও ঐকিক নিয়মের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ নিয়মটি যে কোনও সংখ্যার একক মূল্য নির্ণয় করে পরে তা থেকে বড় বা ছোট যেকোনো পরিমাণ নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
ঐকিক নিয়মের সূত্র কী?
ঐকিক নিয়মের সূত্রটি মোটামুটি তিনটি ধাপে বিভক্ত করা যায়, যা সমাধান প্রক্রিয়াটিকে সুসংহত করে তোলে:
ধাপ ১: মূল বিষয় চিহ্নিত করা
প্রথমে দেখতে হবে কোন উপাদানটি প্রশ্নে দুইবার বলা হয়েছে এবং কোনটি একবার। যে উপাদানটি দুবার উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিই প্রশ্নের প্রধান উপাদান, যা সমাধানের প্রথমে বা বামে বসবে। আর চাওয়া পরিমাণের একক মূল্যের জন্য তথ্যটি শেষে থাকবে।
ধাপ ২: বিষয়টির একক নির্ধারণ
এই ধাপে প্রথম লাইনের বামদিকে ১ বসানো হয়, এবং তার সাথে প্রথম লাইনের ডান দিকের সংখ্যা গুণ বা ভাগের মাধ্যমে মূল একক নির্ধারণ করা হয়। গুণ বা ভাগ নির্বাচনটি নির্ভর করে চাওয়া পরিমাণ বড় বা ছোট হওয়ার উপর।
ধাপ ৩: চূড়ান্ত ফলাফল নির্ণয়
শেষ ধাপে, এককের মূল্যের সাথে চাওয়া পরিমাণ গুণ বা ভাগ করে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ণয় করা হয়।
উদাহরণ: ঐকিক নিয়মের সাহায্যে একটি হিসাব

প্রশ্ন: ৫০টি বইয়ের দাম ১২০০ টাকা হলে, ৩০টি বইয়ের দাম কত হবে?
সমাধান:
১. এখানে বইয়ের পরিমাণ দুবার উল্লেখ করা হয়েছে এবং দাম একবার বলা হয়েছে, তাই বইয়ের সংখ্যা প্রথমে বসবে এবং শেষের দিকে দাম থাকবে।
২. ৫০টি বইয়ের জন্য দাম = ১২০০ টাকা।
৩. ১টি বইয়ের জন্য দাম = ১২০০÷৫০=২৪ টাকা।
৪. ৩০টি বইয়ের জন্য দাম = ২৪×৩০= ৭২০||২৪×৩০=৭২০ টাকা।
এই নিয়ম অনুসরণ করে আমরা ৩০টি বইয়ের দাম সহজেই নির্ণয় করতে পারলাম, যা হলো ৭২০ টাকা।
ঐকিক নিয়মের শর্টকাট টেকনিক
ঐকিক নিয়মে শর্টকাট টেকনিক অনেক সময়ে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যেখানে দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা প্রয়োজন। এই শর্টকাট পদ্ধতিটি মূলত কেবল সংখ্যাগুলো সরাসরি ব্যবহার করে নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
শর্টকাট টেকনিক উদাহরণ
প্রশ্ন: ৪০টি কলমের দাম ৮০০ টাকা হলে, ১০টি কলমের দাম কত হবে?
সমাধান:
১. শুরুতেই ৪০ এবং ৮০০ কে লিখে নিন।
২. ১০টি কলমের জন্য সরাসরি (৮০০ × ১০) ÷ ৪০ = ২০০ টাকা।
শর্টকাট পদ্ধতিটি অনুসরণ করে খুব দ্রুত এবং সহজেই সঠিক সমাধান পাওয়া যায়। বড় প্রশ্নে এই টেকনিকটি ব্যবহার করে সহজে উত্তর নির্ণয় করা সম্ভব।
ঐকিক নিয়মে শতকরা হিসাব
ঐকিক নিয়মে শতকরা নির্ধারণের সময় মূল পরিমাণকে ১০০ দ্বারা ভাগ করে শতকরা হিসাব বের করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন অংশকে শতকরা হিসাবের ভিত্তিতে দেখা হয়, যেটি ঐকিক নিয়মে সমাধান সহজ করে দেয়।
উদাহরণ: শতকরা ভিত্তিতে ঐকিক নিয়মের প্রয়োগ
প্রশ্ন: একটি প্রতিষ্ঠানে ৫০০ জন কর্মী আছে, যার মধ্যে ৩০০ জন পুরুষ। পুরুষদের শতকরা কত হবে?
সমাধান:
১. মোট কর্মী সংখ্যা = ৫০০, পুরুষের সংখ্যা = ৩০০
২. শতকরা হিসেবে পুরুষের সংখ্যা নির্ণয় করতে ঐকিক নিয়ম প্রয়োগ করলে—
(৩০০÷৫০০)×১০০=৬০%
এখানে, ঐকিক নিয়মের ভিত্তিতে সহজেই পুরুষদের শতকরা হিসাব ৬০% নির্ণয় করা যায়।
ঐকিক নিয়মে অনুপাত ব্যবহার
অনুপাতের সাহায্যে ঐকিক নিয়ম প্রয়োগ অনেক সময় কার্যকর হয়, বিশেষ করে দুই বা ততোধিক উপাদানের মধ্যে পরিমাপ নির্ধারণে। এতে বিভিন্ন উপাদানের সংখ্যা বা পরিমাণের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা সহজ হয়।
উদাহরণ: অনুপাতের ভিত্তিতে ঐকিক নিয়ম প্রয়োগ
প্রশ্ন: এক দলে ছেলেমেয়ের অনুপাত ৩:২। যদি দলের মোট সদস্য সংখ্যা ৫০ হয়, তবে মেয়ের সংখ্যা কত?
সমাধান:
১. ছেলেমেয়ের অনুপাত = ৩:২। অর্থাৎ, মোট ৩ + ২ = ৫ অংশ।
২. মেয়েদের অংশ = (২÷৫)×৫০=২০
এই পদ্ধতিতে সহজেই দেখা যায়, মেয়ের সংখ্যা হলো ২০।
ঐকিক নিয়মের কিছু সাধারণ ভুল এবং পরামর্শ
ঐকিক নিয়ম ব্যবহার করার সময় কিছু সাধারণ ভুল হতে পারে, যেমন—
- প্রথম ও শেষ উপাদান চিহ্নিত করতে ভুল করা: সমাধানের ক্ষেত্রে প্রথমে কোনটি বসবে এবং শেষের দিকে কোনটি বসবে, তা নির্ধারণে ভুল করা প্রায়শই ঘটে থাকে। এটি সমাধান প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে।
- গুণ এবং ভাগের সঠিক ব্যবহার না করা: কখন গুণ এবং কখন ভাগ করতে হবে, তা নির্ধারণে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন।
- প্রদত্ত উপাদান থেকে গাণিতিক বাক্য তৈরি করা: সমাধানের সময় অনেকেই প্রদত্ত উপাদান থেকে গাণিতিক বাক্য তৈরি করতে সমস্যা অনুভব করেন।
এই সমস্যাগুলি এড়াতে, প্রতিটি ধাপ নির্ভুলভাবে অনুসরণ করা এবং প্রশ্নটি ভালভাবে বোঝা উচিত।
ঐকিক নিয়মের গুরুত্ব ও সুবিধা
ঐকিক নিয়মের সহজ ও কার্যকরী প্রয়োগ এটি গণিতে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি করে তুলেছে। এর প্রধান সুবিধাগুলি হলো:
- সহজে সমাধান: এটি সহজেই গণিতের জটিল সমস্যাগুলি সমাধান করতে সহায়ক।
- দ্রুত সমাধান: ঐকিক নিয়মের শর্টকাট পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত সমাধান সম্ভব।
- বহুমুখী প্রয়োগ: বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ করা যায়, যা এটিকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
ঐকিক নিয়ম সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
ঐকিক নিয়ম প্রশ্নঃ ঐকিক নিয়মের মাধ্যমে সময় নির্ধারণ কিভাবে সম্ভব?
ঐকিক নিয়মের মাধ্যমে সময় নির্ধারণে মূলত যেকোনো কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নির্ণয় করা হয়, যেমন—একটি কাজ ৫ জন ১০ দিনে করলে ১০ জন তা কত দিনে করতে পারবে? ঐকিক নিয়মের সাহায্যে একক সময় নির্ণয় করে বড় বা ছোট দলে সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।
ঐকিক নিয়ম প্রশ্নঃ ঐকিক নিয়ম কি গণিতে প্রয়োজনীয়?
হ্যাঁ, এটি গণিতের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ এর মাধ্যমে সহজে যে কোন হিসাব-নিকাশ করা যায়। বিভিন্ন সংখ্যার মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণে ঐকিক নিয়মের প্রয়োজনীয়তা অনেক।
ঐকিক নিয়ম প্রশ্নঃ ঐকিক নিয়মের উদাহরণ কী?
উদাহরণস্বরূপ, ৪০টি কলমের দাম ৮০০ টাকা হলে ঐকিক নিয়মে আমরা জানতে পারি ১০টি কলমের দাম কত হবে। একইভাবে অন্য যে কোন সংখ্যা নির্ধারণেও ঐকিক নিয়ম প্রয়োগ করা যায়।
