বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি একটি ব্যবস্থা। ২০২৪ সালের জন্য গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া সুসংগঠিত করেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই সময়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
গুচ্ছ পদ্ধতির অধীনে থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং এ পদ্ধতির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া, যোগ্যতার বিচার,পরীক্ষা ফি, আসন সংখ্যা, মানবণ্টন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কী
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হলো বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থা। ৯টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় এই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আওতাভুক্ত। এছাড়া, দেশের সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি আলাদা কৃষি গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
গুচ্ছ পরীক্ষা কেন হয়
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একত্রিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা একই পরীক্ষার মাধ্যমে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন, যা ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সার্কুলার ২০২৪
২০২৪ সালের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ও আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তারিখ দেওয়া হয়েছে। এ সমস্ত তারিখ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
- আবেদন শুরু: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
- আবেদন শেষ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
- বিজ্ঞান শাখা (A ইউনিট) পরীক্ষা: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, দুপুর ১২.০০ – ১.০০
- মানবিক শাখা (B ইউনিট) পরীক্ষা: ৪ মে ২০২৪, সকাল ১১.০০ – দুপুর ১২.০০
- ব্যবসা শিক্ষা শাখা (C ইউনিট) পরীক্ষা: ১১ মে ২০২৪, সকাল ১১.০০ – দুপুর ১২.০০
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে হবে এবং আবেদন সম্পূর্ণ করার জন্য শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ফি ২০২৪
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ১৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কিছু বিশেষায়িত বিষয়ে আবেদন করার ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা অতিরিক্ত ফি প্রযোজ্য হতে পারে। আবেদন ফি যথাযথভাবে জমা না দিলে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে না, তাই শিক্ষার্থীদের এটি যথাযথভাবে পরিশোধ করতে হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা ও শর্তাবলী
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশের যে কোনো শিক্ষা বোর্ডের ২০২০ ও ২০২১ সালের এসএসসি এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
বিজ্ঞান শাখা (A ইউনিট) আবেদন যোগ্যতা:
- এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৭.০০ থাকতে হবে।
- পৃথকভাবে এসএসসি ও এইচএসসি-তে চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ ৩.৫০ প্রয়োজন।
মানবিক শাখা (B ইউনিট) আবেদন যোগ্যতা:
- এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৬.০০ থাকতে হবে।
- পৃথকভাবে এসএসসি ও এইচএসসি-তে চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ ৩.০০ প্রয়োজন।
বাণিজ্য শাখা (C ইউনিট) আবেদন যোগ্যতা:
পৃথকভাবে এসএসসি ও এইচএসসি-তে চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ ৩.৫০ প্রয়োজন।
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৬.৫০ থাকতে হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন ২০২৪
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা মূলত এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী) পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে নেওয়া হয়। প্রতিটি বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট মানবন্টন রয়েছে।
বিজ্ঞান শাখা (A ইউনিট):
- পদার্থবিজ্ঞান: ২৫ নম্বর (আবশ্যিক)
- রসায়ন: ২৫ নম্বর (আবশ্যিক)
- জীববিজ্ঞান বা গণিত: ২৫ নম্বর থেকে যেকোনো একটি
- বাংলা বা ইংরেজি: ২৫ নম্বর থেকে যেকোনো একটি
মানবিক শাখা (B ইউনিট):
- বাংলা: ৩৫ নম্বর
- ইংরেজি: ৩৫ নম্বর
- সাধারণ জ্ঞান: ৩০ নম্বর
বাণিজ্য শাখা (C ইউনিট):
ইংরেজি: ১৫ নম্বর
হিসাববিজ্ঞান: ৩৫ নম্বর
ব্যবস্থাপনা: ৩৫ নম্বর
বাংলা: ১৫ নম্বর

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও প্রাপ্তির নিয়ম
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে, যা https://gstadmission.ac.bd লিঙ্কে পাওয়া যাবে। পরীক্ষা শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের Applicant ID এবং পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে রেজাল্ট চেক করতে পারবেন।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম ও সিলেবাস ২০২৪
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সিলেবাস অনুসারে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তাই শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সিলেবাস অনুযায়ী গুচ্ছ পরীক্ষা দিতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা আরও আত্মবিশ্বাসের সাথে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে, কারণ পূর্বের সিলেবাসের সাথে এই সিলেবাসের পার্থক্য নেই।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আওতায় বর্তমানে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া, একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ও এই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।
সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ:
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
- ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়
- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
- কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
- শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ:
- হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পিরোজপুর ও কিশোরগঞ্জ)
- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ প্রশ্নাবলি (FAQs)
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে কি?
না, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কোথায় হবে?
এই পরীক্ষা দেশের মোট ১৯টি কেন্দ্রে আয়োজন করা হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পাস নম্বর কত?
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩০। তবে প্রতি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে।
কীভাবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আবেদন করবেন?
https://gstadmission.ac.bd ওয়েবসাইটে Applicant ID এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে আবেদন ফর্ম পূরণ করা যাবে।
লেখকের শেষ কথা
তো প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে এবং একটি কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার অধীনে পরীক্ষা দিতে পারবে। আশা করা যায়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ভূমিকা পালন করবে।আপনি আমাদের এই আর্টিকেলটা আপনাদের বন্ধুদের নিকট সাড়ে করে দিতে পারেন।
