উপসর্গ কাকে বলে
উপসর্গ কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে এটি কী এবং এর ভূমিকা কী। উপসর্গ হলো এমন একটি ভাষিক ও ব্যাকরণগত উপাদান, যা শব্দের শুরুতে যুক্ত হয়ে শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে বা সম্প্রসারিত করে। এটি একা অর্থাৎ নিজে নিজে কোনো অর্থ প্রকাশ করতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, “অ” উপসর্গ যোগ করে “ন্যায়” শব্দ থেকে “অন্যায়” তৈরি হয়। এখানে উপসর্গ কাকে বলে সেটি স্পষ্ট হয় যে, এটি শব্দের নতুন অর্থ প্রদান করে
উপসর্গ সাধিত শব্দ কি?
যে সমস্ত শব্দ উপসর্গের সাহায্যে গঠিত হয়, সেগুলোকে উপসর্গ সাধিত শব্দ বলা হয়। এটি শব্দের মূল অর্থ পরিবর্তন করে নতুন অর্থ তৈরি করে। উদাহরণ: “অ + বিদ্যা = অবিদ্যা।” এই গঠনে আমরা বুঝতে পারি উপসর্গ কাকে বলে এবং উপসর্গ সাধিত শব্দ কি, এবং এটি কীভাবে শব্দের অর্থে পরিবর্তন আনে।
উপসর্গের কাজ কি?
উপসর্গের প্রধান কাজ হলো শব্দের অর্থ পরিবর্তন করা এবং কখনো কখনো বিপরীতার্থক অর্থ তৈরি করা। এটি নতুন শব্দ তৈরিতে এবং ভাষার প্রসার ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ:
- “অ” উপসর্গ: “অসৎ” (বিপরীত অর্থ)।
- “সু” উপসর্গ: “সুবিচার” (পজিটিভ অর্থ)।
এভাবে, উপসর্গের কাজ ও ব্যবহার কীভাবে ভাষার গঠনকে উন্নত করে, তা সহজেই বোঝা যায়।
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য:
- উপসর্গ একা কোনো অর্থ প্রকাশ করতে পারে না।
- এটি শব্দের শুরুতে যুক্ত হয়।
- এটি শব্দের মূল অর্থ পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করে।
- ভাষার নতুন শব্দ গঠনে সাহায্য করে।
- উপসর্গ বিভিন্ন উৎস থেকে এসেছে, যেমন খাঁটি বাংলা, তৎসম, বা বিদেশি।
উপরোক্ত বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে এর গুরুত্ব আরো ভালোভাবে বুঝতে পারা যায়।
উপসর্গ কত প্রকার ও কী কী?

বাংলা ভাষায় উপসর্গ তিন প্রকারের হয়:
- খাঁটি বাংলা উপসর্গ
- তৎসম উপসর্গ
- বিদেশি উপসর্গ
খাঁটি বাংলা উপসর্গ কাকে বলে
খাঁটি বাংলা উপসর্গ হলো বাংলা ভাষার নিজস্ব উপাদান, যা বাংলা ভাষার গঠনে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: “অ,” “সু,” এবং “নি।” এটি বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপকে নির্দেশ করে। এই প্রশ্নের উত্তরে খাঁটি বাংলা উপসর্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খাঁটি বাংলা উপসর্গ কয়টি
বাংলা ভাষায় খাঁটি বাংলা উপসর্গের সংখ্যা ২১টি। নিচে খাঁটি বাংলা উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন ও খাঁটি বাংলা উপসর্গ গুলো কী কী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
খাঁটি বাংলা উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন
উপসর্গ কাকে বলে এবং এর ব্যবহার কীভাবে শব্দ গঠনে সাহায্য করে, তা নিম্নোক্ত উদাহরণ থেকে বোঝা যায়:
- অ + যোগ্য = অযোগ্য
- সু + দৃষ্টি = সুদৃষ্টি
- নি + চাল = নিচাল
খাঁটি বাংলা উপসর্গ গুলো কী কী
খাঁটি বাংলা উপসর্গগুলো হলো:
অ, অঘা, অজ, আ, আড়, আন, আব, ইতি, ঊন, কদ, কু, নি, পাতি, বি, ভর, রাম, সা, সু, হা।
তৎসম উপসর্গ কাকে বলে
তৎসম উপসর্গ হলো সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া উপাদান, যা বাংলা ভাষায় শব্দের অর্থ সম্প্রসারণ করে। উদাহরণ: “অতি,” “উপ,” “প্র।” এটি প্রমাণ করে উপসর্গ কাকে বলে এবং কীভাবে এটি বিভিন্ন ভাষা থেকে প্রভাবিত হয়েছে।
তৎসম উপসর্গ কয়টি
তৎসম উপসর্গের সংখ্যা ২০টি। তৎসম উপসর্গগুলো তৎসম ভাষা অথবা সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে।নিচে তৎসম উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন এবং তৎসম উপসর্গ গুলো কী কী নিয়ে ঘাটাঘাটি করে হলো
তৎসম উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন
তৎসম উপসর্গ ব্যবহার করে গঠিত শব্দের উদাহরণ:
- অতি + মহৎ = অতিমহৎ
- উপ + কেন্দ্র = উপকেন্দ্র
- প্রতি + দিন = প্রতিদিন
তৎসম উপসর্গ গুলো কী কী
তৎসম উপসর্গগুলো হলো: প্র, নি, অপ, সম, অব, অনু, নির, দুর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ।এই ২০ টি উপসর্গ তৎসম শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে
বিদেশি উপসর্গ কাকে বলে
বিদেশি ভাষা থেকে গৃহীত উপসর্গগুলোকে বিদেশি উপসর্গ বলা হয়। উদাহরণ: “ডি,” “টেলি,” “সাব।” বাংলা ভাষায় এগুলো আধুনিক প্রভাবের সূচনা করে।
বিদেশি উপসর্গ কয়টি
বিদেশি উপসর্গের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এটি বিভিন্ন ভাষা, যেমন ফারসি, আরবি, ইংরেজি থেকে এসেছে।
বিদেশি উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন
বিদেশি উপসর্গ ব্যবহার করে গঠিত শব্দ:
- ডি + কোড = ডিকোড
- টেলি + ফোন = টেলিফোন
- সাব + মেরিন = সাবমেরিন
বিদেশি উপসর্গ কী কী
ফারসি: কম, দর, না।
আরবি: আম, লা।
ইংরেজি: সাব, হেড, ফুল।
প্রত্যয় ও উপসর্গের মধ্যে পার্থক্য কী?
| উপসর্গ | প্রত্যয় |
|---|---|
| শব্দের শুরুতে বসে। | শব্দের শেষে বসে। |
| শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। | শব্দের শ্রেণি পরিবর্তন করে। |
| উদাহরণ: অসৎ। অ হলো উপসর্গ | উদাহরণ: লেখক। লেখ+ক। ক হলো প্রত্যয় |
উপসর্গ কাকে বলে এটি বোঝার সময় প্রত্যয়ের সঙ্গেও তুলনা করা ভালো।কারণ উপসর্গ একটি অপরটির বিপরীত প্রায়।উপসর্গ যেমন শব্দের পূর্বে বসে অপরদিকে প্রত্যয় শব্দের পরে বসে থাকে।
আরও পড়ুন-সমাস কাকে বলে
উপসর্গ মনে রাখার কৌশল
উপসর্গ ,তা মনে রাখা সহজ নয়, তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে এটি সহজ করা যেতে পারে। এখানে উপসর্গ মনে রাখার কয়েকটি ভালো এবং উপকারী কৌশল তুলে ধরা হলো:
প্রতিদিনের প্র্যাকটিস: প্রতিদিনের কথোপকথনে উপসর্গগুলো ব্যবহার করে বাক্য গঠন করা। এতে উপসর্গের ব্যবহারিক দিকটি ভালোভাবে শেখা যায়।
উদাহরণসহ শেখা ও উচ্চারণ করা: প্রতিটি উপসর্গের সাথে উদাহরণ শব্দ যুক্ত করে শেখা। যেমন, “অ” উপসর্গের উদাহরণ “অযোগ্য”, “সু” উপসর্গের উদাহরণ “সুন্দর”।
কার্ড তৈরি করা: উপসর্গ ও তার উদাহরণ সহ কার্ড তৈরি করে নিয়মিত অনুশীলন করা। এতে মুখে মনে থাকে এবং সহজে পুনরাবৃত্তি হয়।
বিভাগভেদে ভাগ করা: উপসর্গগুলোকে খাঁটি বাংলা, তৎসম, বিদেশি প্রভৃতি বিভাগে ভাগ করে রাখা। এটি মনে রাখতে সাহায্য করে কোন উপসর্গ কোন শ্রেণির।
গান বা ছড়া তৈরি করা: উপসর্গগুলো মনে রাখার জন্য গান বা ছড়া তৈরি করা। মিউজিক্যাল প্যাটার্নের মাধ্যমে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।
উপসর্গ শব্দের কোথায় বসে
উপসর্গ সবসময় শব্দের শুরুতে বসে এবং শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। উদাহরণ: “অ + ধিকার = অধিকার।”যেমন এখানে অ হলো উপসর্গ।উপসর্গের সাধারণত কোনো অর্থ থাকেনা।
উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠনের নিয়ম
আচ্ছা পাঠক বন্ধুরা,উপসর্গ তা বোঝার পরে, উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠনের নিয়ম জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপসর্গ শব্দের আগে যুক্ত হয়ে তার অর্থ পরিবর্তন বা সম্প্রসারণ করে। এটি মূল শব্দের অর্থকে প্রভাবিত করে নতুন শব্দ তৈরি করে
উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠনের কিছু নিয়ম:
- উপসর্গ এবং মূল শব্দের সংমিশ্রণ
উপসর্গ মূল শব্দের আগে যুক্ত হয়। যেমন,- “অ” + “যোগ্য” = “অযোগ্য”
- “সু” + “দৃষ্টি” = “সুদৃষ্টি”
এখানে “অ” এবং “সু” মূল শব্দের অর্থ পরিবর্তন করেছে।
- অর্থের পরিবর্তন
উপসর্গ যুক্ত হলে শব্দের মূল অর্থ বদলে যায়। যেমন,- “নি” + “শান্তি” = “নিশান্তি” (শান্তির অভাব)।
- “অ” + “ন্যায়” = “অন্যায়” (ন্যায়ের বিপরীত)।
- উচ্চারণে সামঞ্জস্যতা
কখনো কখনো উপসর্গ যুক্ত হলে উচ্চারণে সামান্য পরিবর্তন হয়। যেমন,- “অনু” + “উৎসাহ” = “অনুৎসাহ”।
- “অ” + “সম্ভব” = “অসম্ভব”।
- শব্দের শ্রেণি পরিবর্তন নয়
উপসর্গ শব্দের অর্থ পরিবর্তন করলেও এটি শব্দের শ্রেণি (noun, verb, adjective) বদলায় না। যেমন:- “সু” + “গুণ” = “সুগুণ”।
- প্রতিটি উপসর্গের নির্দিষ্ট ব্যবহার
প্রতিটি উপসর্গের নিজস্ব ব্যবহার ও অর্থ থাকে। যেমন:- “উপ” উপসর্গ শব্দের নিকটস্থতা বা সংযোগ বোঝায়।
- “অ” উপসর্গ বিরোধিতা বা অভাব প্রকাশ করে।
উদাহরণ:
- বিদেশি উপসর্গ:
“সাব” + “ইন্সপেক্টর” = “সাবইন্সপেক্টর”। - তৎসম উপসর্গ:
“অতি” + “শক্তি” = “অতিশক্তি”। - খাঁটি বাংলা উপসর্গ:
“নি” + “চাল” = “নিচাল”।
উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠনের এই নিয়মগুলো বাংলা ভাষায় উপসর্গ শিখতে আপনাকে অনেক অনেক ভাবে সাহায্য করতে পারে। পরবর্তীতেও আপনার কাজে লাগতে পারে
উপসর্গ নিজে অর্থ প্রকাশ করতে পারে না, তবে এটি শব্দের অর্থকে দ্যোতনা প্রদান করে। উদাহরণ: “অ + ন্যায় = অন্যায়।”
FAQ।প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন
উপসর্গ কাকে বলে ও কী কী?
উপসর্গ হলো শব্দের শুরুতে বসা উপাদান, যা শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে। উদাহরণ: অ, সু।
বাংলা ভাষায় কত প্রকার উপসর্গ আছে?
বাংলা ভাষায় উপসর্গ তিন প্রকারের: খাঁটি বাংলা, তৎসম, বিদেশি।
