সমাস কাকে বলে।সমাস কত প্রকার ও কি কি সংজ্ঞা সহ উদাহরণ

Written by Mas-IT Team

Published on:

সমাস কাকে বলে: সমাসের প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং প্রয়োজনীয়তা

বাংলা ভাষার ব্যাকরণে সমাস কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমাসের মাধ্যমে বাক্যের গঠন সহজ, সুস্পষ্ট, এবং সংক্ষিপ্ত হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভাষা ব্যবহারকে সুশৃঙ্খল এবং মসৃণ করতে সমাস ব্যাকরণে খুবই প্রয়োজনীয়।

এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো সমাস কাকে বলে, সমাসের অর্থ, এর বৈশিষ্ট্য, প্রয়োজনীয়তা, এবং বিভিন্ন প্রকার সমাসের উদাহরণ। সমাস সম্পর্কে আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাবেন এখানে, যা পড়ে সমাসের উপর একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারবেন।

সমাস কাকে বলে?

সমাস শব্দটির অর্থ হলো মিলন বা সংক্ষিপ্ত। যখন দুটি বা ততোধিক শব্দকে একত্রিত করে নতুন একটি শব্দে পরিণত করা হয় এবং সেই শব্দগুলি একে অপরের অর্থকে সমর্থন করে, তখন তাকে সমাস বলা হয়। সমাস ব্যবহারের ফলে বাক্যটি সংক্ষিপ্ত হলেও তার অর্থ সুস্পষ্ট হয়। সমাসের মাধ্যমে বাক্যটি মসৃণ ও প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে, যা পড়তে এবং বুঝতে সহজ হয়।

সমাস কাকে বলে প্রশ্নের উত্তর সহজ করে বললে, দুটি বা তার বেশি শব্দকে একত্র করে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করাই সমাসের কাজ।

সমাস শব্দের অর্থ কী?

সমাস শব্দটি মূলত সংস্কৃত থেকে এসেছে, যার অর্থ মিলন বা সংক্ষেপণ। বাংলা ব্যাকরণে সমাসের মাধ্যমে বাক্যের দৈর্ঘ্য হ্রাস পায় এবং এর মাধ্যমে বাক্যের বিষয়বস্তু আরও প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়।

সমাসের বৈশিষ্ট্য

সমাসের মাধ্যমে বাক্যের সংক্ষেপণ ঘটে। এটি বাক্যকে সহজ, সরল, এবং গঠনগতভাবে সুন্দর করে তোলে। সমাসের বৈশিষ্ট্য গুলি হলো:

  1. বাক্যের দৈর্ঘ্য হ্রাস করে।
  2. গঠন সহজ এবং মসৃণ হয়।
  3. অর্থ প্রকাশে স্পষ্টতা আনে।
  4. একাধিক শব্দ একত্রে মিলে নতুন অর্থ তৈরি করে।

সমাসের প্রয়োজনীয়তা

সমাসের প্রয়োজনীয়তা আমাদের ভাষার ব্যবহারকে আরও সুন্দর এবং সরল করে তোলে। এটি এমন একটি ভাষাগত প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভাষার সারল্য এবং গঠনবদ্ধতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। সমাসের ব্যবহারে কথা বলা এবং লিখিত ভাষা সহজ এবং মসৃণ হয়ে ওঠে।

সমাস কত প্রকার ও কি কি?

বাংলা ভাষায় সমাস প্রধানত পাঁচটি প্রকারে বিভক্ত। প্রতিটি প্রকারের ব্যাখ্যা এবং উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলো:

  1. দ্বন্দ্ব সমাস
  2. দ্বিগু সমাস
  3. কর্মধারয় সমাস
  4. তৎপুরুষ সমাস
  5. বহুব্রীহি সমাস
  6. অব্যয়ীভাব সমাস
সমাস কাকে বলে

দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

দ্বন্দ্ব সমাস এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুটি সমান প্রধান্য সম্পন্ন পদ একসাথে মিলে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে। দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে এর উদাহরণ দিতে গেলে বলা যায়, ‘মা-বাবা’, ‘দিনরাত’ ইত্যাদি।

দ্বন্দ্ব সমাসের বৈশিষ্ট্য:

  • দুইটি পদ একসাথে মিলিত হয়ে একটি অর্থ তৈরি করে।
  • একে এক ধরনের মিলন বলা যেতে পারে, যেখানে উভয় পদ সমান গুরুত্ববাহী।

দ্বন্দ্ব সমাস কত প্রকার ও কি কি?

দ্বন্দ্ব সমাস মূলত দুই প্রকারের:

  • সম্প্রদা দ্বন্দ্ব: এখানে দুটি ভিন্ন অর্থ নির্দেশক পদ মিলে একত্রিত হয়।
  • সম্প্রস্তুত দ্বন্দ্ব: এখানে দুটি শব্দ একত্রে সম্পূর্ণ নতুন অর্থ তৈরি করে।

. দ্বিগু সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

দ্বিগু সমাস কাকে বলে জানতে চাইলে বলি, এটি এমন সমাস যেখানে প্রথম পদটি সংখ্যা নির্দেশক। এই প্রকারের সমাসের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘ত্রিকোণ’ (ত্রি+কোণ), ‘দ্বিপদী’ (দ্বি+পদী)।

দ্বিগু সমাসের বৈশিষ্ট্য:

  • সংখ্যা নির্দেশক পদগুলি এই ধরনের সমাসে ব্যবহৃত হয়।
  • দ্বিগু সমাস বাক্যের অর্থকে সুনির্দিষ্ট এবং নির্দিষ্ট করে তোলে।

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

কর্মধারয় সমাস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুটি পদ মিলে নতুন একটি অর্থ তৈরি করে, যেখানে প্রথম পদটি বিশেষ্য এবং দ্বিতীয় পদটি বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: ‘রাজপুত্র’ (রাজ+পুত্র), ‘জ্ঞানপিপাসু’ (জ্ঞান+পিপাসু)।

কর্মধারয় সমাসের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রথম পদটি প্রধান এবং দ্বিতীয় পদটি সেই পদের বিশেষণ।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে উদাহরণ সহ

তৎপুরুষ সমাস হলো এমন একটি সমাস যেখানে একটি পদের অধিকার থাকে। উদাহরণ: ‘আত্মসমর্পণ’ (আত্ম+সমর্পণ), ‘দেশবরণ’ (দেশ+বরণ)।

তৎপুরুষ সমাসের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রথম শব্দটি অধিকার বা মালিকানার অর্থ প্রকাশ করে।

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

বহুব্রীহি সমাস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নতুন গঠিত শব্দটি উভয় পদের অর্থ প্রকাশ না করে বরং একটি সম্পূর্ণ নতুন অর্থ তৈরি করে। উদাহরণ: ‘জন্মান্ধ’ (জন্ম+অন্ধ)।

বহুব্রীহি সমাসের বৈশিষ্ট্য:

  • এটি এক ধরনের বিশেষণ সমাস, যেখানে একটি নতুন অর্থ তৈরি হয়।

অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

অব্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে জানতে চাইলে বলি, এটি এমন সমাস যেখানে অব্যয় পদ ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: ‘অবধি’, ‘সম্মুখ’ ইত্যাদি।

অব্যয়ীভাব সমাসের বৈশিষ্ট্য:

  • প্রথম পদটি অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

FAQ: সমাস সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন

  1. সমাসের অংশ কয়টি?
    সমাসের দুটি প্রধান অংশ থাকে: পূর্বপদ এবং পরপদ।
  2. ব্যাসবাক্য কাকে বলে?
    সমাস ভেঙে যে বাক্য গঠন করা হয়, তাকে ব্যাসবাক্য বলা হয়।
  3. সমস্তপদ কাকে বলে?
    সমাসের মাধ্যমে যে নতুন শব্দ তৈরি হয়, সেটি সমস্তপদ নামে পরিচিত।
  4. সমাস চেনার সহজ উপায় কী?
    সমাস চেনার সহজ উপায় হলো শব্দ গঠনের ধরন এবং পদের সংমিশ্রণ দেখে বোঝা।
  5. করপল্লব কোন সমাস?
    করপল্লব একটি কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ।
  6. নদীমাতৃক কোন সমাস?
    নদীমাতৃক শব্দটি বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ।

উপসংহার

বাংলা ব্যাকরণে সমাস কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর জানা ভাষার গভীরতা বোঝার জন্য অপরিহার্য। সমাসের মাধ্যমে বাক্য সংক্ষেপিত হলেও তা প্রাঞ্জল এবং অর্থবহ হয়ে ওঠে, যা ভাষার সৌন্দর্য এবং গঠনকে আরও সমৃদ্ধ করে। সমাস কাকে বলে এই প্রশ্নের উত্তর জানার পাশাপাশি আমরা সমাসের বিভিন্ন প্রকার, এর বৈশিষ্ট্য এবং উদাহরণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি।

দৈনন্দিন জীবনে সঠিক ও সুন্দরভাবে ভাষার ব্যবহার করতে সমাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের বাক্যের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা এবং বিভিন্ন শব্দের মধ্যে অর্থের স্পষ্টতা আনার জন্য সমাস অপরিহার্য। যেমন, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু, কর্মধারয় প্রভৃতি সমাস বাক্যকে আরও বোধগম্য এবং সজ্জিত করে তোলে।

বাংলা ভাষার গভীরতা ও শৈলী প্রকাশে সমাসের ভূমিকা অনেক। আশা করি, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সমাস কাকে বলে এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে আপনার পূর্ণাঙ্গ ধারণা হয়েছে। সঠিকভাবে সমাস ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষার যথাযথ রূপ ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা যায়।

Mas-IT Team

হ্যালো, আমি জারীফ। আমি একজন স্টুডেন্ট। আমি মূলত শিক্ষা বিষয়ে লেখালেখি করে থাকি। আশাকরি আমি আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পারছি।