চিঠি লেখার নিয়ম।বাংলা চিঠি লেখার নিয়ম

Written by Mas-IT Team

Updated on:

চিঠি একসময় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ইমেইল, মেসেজিং অ্যাপ ইত্যাদি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও চিঠির গুরুত্ব এখনও রয়ে গেছে। ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ, আনুষ্ঠানিক কাজ, বা স্মৃতির সংরক্ষণে চিঠির ভূমিকা অনন্য। তবে, চিঠি লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং কাঠামো অনুসরণ করা প্রয়োজন যা চিঠিকে সঠিক ও অর্থবহ করে তোলে।এই আর্টিকেলে আমরা চিঠি লেখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনাকে চিঠি লেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

চিঠি কাকে বলে

চিঠি হলো লিখিত বার্তার একটি মাধ্যম, যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মৌখিক যোগাযোগের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী। চিঠি সাধারণত দুটি উদ্দেশ্যে লেখা হয়:

  • ব্যক্তিগত অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশ বা আদান প্রদান।
  • ব্যবহারিক বা আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রেরণ।

চিঠি লেখার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে এটি প্রাপকের কাছে স্পষ্ট এবং সহজবোধ্য হয়ে

চিঠি কত প্রকার ও কি কি

চিঠি প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।নিচে চিঠির দুটি ভাগ দেওয়া হলো।

ব্যক্তিগত চিঠি

যে চিঠি বন্ধু, পরিবার বা প্রিয়জনদের উদ্দেশ্যে লেখা হয় তাকে ব্যক্তিগত চিঠি বলে। এই চিঠিগুলোতে অনুভূতি, শুভেচ্ছা, বা দৈনন্দিন জীবনের কথা শেয়ার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে বা কুশল বিনিময় করতে ব্যক্তিগত চিঠি লেখা হয়।

আনুষ্ঠানিক বা ব্যবহারিক চিঠি

পেশাগত বা আনুষ্ঠানিক কাজের জন্য লেখা চিঠিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি বলা হয়। যেমন: চাকরির জন্য আবেদন, ব্যবসায়িক চুক্তি বা কোনো নোটিশ। এই চিঠিতে গঠনমূলক ভাষা এবং নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা হয়।

আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা জরুরি। সঠিক চিঠি লেখার নিয়ম মেনে লেখা হলে এটি প্রাপকের উপর ভালো প্রভাব ফেলে।

চিঠি লেখার নিয়ম

চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে এটি চিঠিকে আরও চমৎকার করে তোলে। ব্যক্তিগত এবং আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়মগুলো আলাদা। নিচে উভয় প্রকার চিঠি লেখার নিয়ম আলোচনা করা হলো।চিঠি লেখার নিয়ম জানা না থাকলে আপনি যেকোনো সময় ভালো করে চিঠি লেখতে পারবেন না।এতে আপনাকে যেকোনো সময় অপমান হতে পারে।তাই নিচে দেওয়া চিঠি লেখার নিয়ম গুলো আপনার জানা থাকলে আপনার ভবিষ্যতে চিঠি লেখতে কোনো সমস্যা হবে না।

ব্যক্তিগত চিঠি লেখার নিয়ম

ব্যক্তিগত চিঠি লেখার সময় নিম্নলিখিত নিয়মগুলো অনুসরণ করা উচিত:

  1. সম্বোধন: প্রিয়জনকে আন্তরিক এবং সহজ ভাষায় সম্বোধন করুন।
  2. ভাষার সরলতা: সরল এবং আবেগপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করুন।
  3. মূল বিষয়: চিঠির মূল উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে লিখুন।
  4. উপসংহার: চিঠির শেষে ভালোবাসা, শুভকামনা বা আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করুন।

ব্যক্তিগত চিঠি লেখার সময় অত্যধিক আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে চলুন।

আনুষ্ঠানিক বা ব্যবহারিক চিঠি লেখার নিয়ম

আনুষ্ঠানিক চিঠি লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা হয়:

  1. প্রেরকের ঠিকানা: চিঠির শুরুর দিকে প্রেরকের ঠিকানা উল্লেখ করুন।
  2. তারিখ: চিঠির তারিখ স্পষ্টভাবে লিখুন।
  3. প্রাপকের ঠিকানা: প্রাপকের নাম এবং ঠিকানা সঠিকভাবে লিখুন।
  4. বিষয়: চিঠির বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করুন।
  5. মূল অংশ: নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করুন।
  6. শেষ: বিনীতভাবে বিদায় জানিয়ে নাম এবং স্বাক্ষর যুক্ত করুন।

ব্যক্তিগত চিঠির উদাহরণ

গ্রাম: নয়নপুর, থানা: কালীগঞ্জ, জেলা: ঝিনাইদহ।
তারিখ: ১৫/১১/২০২৪

শ্রদ্ধেয় আব্বা,

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আপনি ভালো আছেন এবং বাড়ির সবাই সুস্থ আছেন। আমার লেখাপড়ার একটি বিষয় নিয়ে আপনাকে জানাতে চিঠি লিখছি।

আমাদের স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে ৫ই ডিসেম্বর থেকে। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কিছু নতুন বই কেনা প্রয়োজন। এছাড়া মাসিক বেতন এবং পরীক্ষার ফি শীঘ্রই জমা দিতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫০০ টাকা দরকার। সময়মতো এই টাকা না পেলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে।

আব্বা, যদি সম্ভব হয়, ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে টাকা পাঠালে আমি খুব উপকৃত হবো। আপনার শরীরের যত্ন নেবেন এবং আম্মাকে বলবেন যেন আমার জন্য দোয়া করেন।

পরীক্ষার জন্য বাড়ি আসতে না পারায় মন খারাপ করবেন না। আশা করি শীঘ্রই বাড়ি আসতে পারব।

ইতি,
আপনার আদরের
রাফি

আনুষ্ঠানিক চিঠির উদাহরণ

তারিখ: ১৫/১১/২০২৪

বরাবর,

উপজেলা নির্বাহী অফিসার
বড়াইগ্রাম উপজেলা
নাটোর।

বিষয়: একটি পাঠাগার স্থাপনের আবেদন।

মাননীয়,
নম্র নিবেদন এই যে, আমাদের বড়াইগ্রাম এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। পাশাপাশি একটি কলেজও রয়েছে। এখানকার বড় বাজার ও আশপাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ, বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী, এই এলাকায় আসা-যাওয়া করে। কিন্তু পাঠাগারের অভাবে তারা শিক্ষামূলক সময় কাটানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

একটি পাঠাগার স্থাপিত হলে, এখানকার ছাত্র-ছাত্রী এবং স্থানীয় জনগণ বই পড়ে সময় কাটানোর সুযোগ পাবে, যা তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি, মননের বিকাশ এবং সৃজনশীল চিন্তাধারার উন্নতিতে সহায়তা করবে।

অতএব, আমাদের এলাকার মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে, অতি দ্রুত বড়াইগ্রামে একটি পাঠাগার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক:
বড়াইগ্রাম এলাকার জনগণের পক্ষে,
আনিসুর রহমান।

চিঠির অংশ কয়টি ও কি কি

একটি চিঠি সাধারণত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত।নিচে চিঠির 3 টি অংশ দেওয়া হলো ও আলোচনা করা হলো।

চিঠির শুরু: এখানে প্রেরকের ঠিকানা, তারিখ এবং প্রাপকের নাম উল্লেখ করা হয়।

মধ্যাংশ: এটি চিঠির মূল বার্তা যেখানে চিঠি লেখার উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হয়।

শেষাংশ: শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ, এবং প্রেরকের নাম বা স্বাক্ষর দিয়ে চিঠি শেষ করা হয়।

চিঠির বিভিন্ন অংশ লেখার নিয়ম

যেহেতু চিঠির তিনটি অংশ তাই তিনটি অংশ আপনাকে লেখার জন্য আলাদাভাবে জানতে হবে। চিঠির শুরু চিঠির মধ্যাংশ এবং চিঠি শেষ অংশ লেখার জন্য আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস ফলো করতে হবে। চিঠির শুরু চিঠির মধ্যাংশ ও চিঠির শেষ অংশ ভালো করে না লিখলে আপনার চিঠি অসম্পূর্ণ থেকে যেত। আরেকটি অসম্পূর্ণ চিঠি কখনই কোন কাজ করবে না। তাই নিচের নিয়মগুলো দেখে নিন এবং সুন্দর একটি চিঠি লেখতে শুরু করে দিন।

চিঠি লেখার নিয়ম
চিঠি লেখার নিয়ম

চিঠির শুরু লেখার নিয়ম

চিঠির শুরু হলো প্রাথমিক পরিচিতি এবং বার্তা প্রেরণের প্রস্তুতি। এটি চিঠির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ প্রাপকের কাছে প্রথম নজরে চিঠি সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।

প্রেরকের ঠিকানা:
চিঠির শুরুর দিকে প্রেরকের ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হয়। এটি প্রাপকের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষত যদি চিঠি অফিসিয়াল বা আনুষ্ঠানিক হয়। ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রাপকের কাছে প্রেরকের পরিচিতি নিশ্চিত করে।নিচে উদাহরণ দেওয়া হলো:

জনাব মো. রাহাত হোসেন
বাড়ি নম্বর ১২, রোড নম্বর ৫
ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯

তারিখ:
চিঠি লেখার তারিখ উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রাপকের কাছে সময় সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ড রাখার জন্য সহায়ক হয়।তারিখ লেখার একটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো

তারিখ: ২১ নভেম্বর, ২০২৪

প্রাপকের নাম এবং সম্বোধন:
প্রাপকের নাম ও উপাধি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এটি চিঠিকে আরও ব্যক্তিগত এবং প্রাসঙ্গিক করে তোলে। আনুষ্ঠানিক চিঠিতে সম্বোধন আরও পেশাদার হতে হবে।

উদাহরণ:সম্মানিত জনাব,

চিঠির মধ্যংশ লেখার নিয়ম

চিঠির মধ্যাংশ হলো মূল অংশ, যেখানে চিঠি লেখার উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয় তথ্য বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটি প্রাপকের কাছে বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়ার কেন্দ্রবিন্দু।

  1. মূল কথা:,
    চিঠির উদ্দেশ্য এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এটি হতে পারে কুশল বিনিময়, অনুরোধ, তথ্য প্রদান, বা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা।
  2. সরল ও প্রাসঙ্গিক ভাষা:
    সরল এবং স্পষ্ট ভাষায় বার্তা উপস্থাপন করা উচিত, যাতে প্রাপক সহজেই বুঝতে পারেন। অতিরিক্ত জটিল বাক্য এড়িয়ে বার্তাকে সংক্ষিপ্ত ও সুসংবদ্ধ রাখা জরুরি।
  3. কিছু মনকে আকৃষ্ট করা ভাষা ব্যবহার করা
    ব্যক্তিগত চিঠিতে আবেগপ্রবণ বা আন্তরিক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে, আনুষ্ঠানিক চিঠিতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠির শেষাংশ লেখার নিয়ম

চিঠির শেষাংশ হলো প্রাপকের কাছে বার্তা শেষ করার একটি উপায়। এটি প্রেরকের আন্তরিকতা এবং উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে।

শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ:
চিঠি বন্ধ করার সময় প্রাপককে ধন্যবাদ জানানো এবং শুভেচ্ছা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ব্যক্তিগত এবং আনুষ্ঠানিক উভয় চিঠির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।উদাহরণ (ব্যক্তিগত চিঠি):

ভালো থেকো এবং আমাদের সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল।

প্রেরকের নাম বা স্বাক্ষর:
চিঠি শেষ করার সময় প্রেরকের নাম উল্লেখ বা স্বাক্ষর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রাপকের কাছে চিঠি প্রেরকের পরিচিতি নিশ্চিত করে।

উদাহরণ:স্নেহের
মো. রাহাত হোসেন

চিঠির খাম লেখার নিয়ম

চিঠির খাম লেখার ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত:

চিঠি লেখার নিয়ম
চিঠি লেখার নিয়ম
  1. প্রাপকের ঠিকানা: খামের মাঝখানে পরিষ্কারভাবে প্রাপকের ঠিকানা লিখুন।
  2. প্রেরকের ঠিকানা: খামের বাম দিকে উপরের অংশে প্রেরকের ঠিকানা উল্লেখ করুন।
  3. ডাকটিকিট: প্রয়োজনীয় ডাকটিকিট সঠিক স্থানে লাগান।

আরও পড়ুন-আবেদন পত্র লেখার নিয়ম

চিঠি লেখার নিয়ম নিয়ে লেখকের শেষ কথা

চিঠির শুরু, মধ্যাংশ এবং শেষাংশ—প্রতিটি অংশে যথাযথ কাঠামো অনুসরণ করলে চিঠি হয়ে ওঠে প্রাসঙ্গিক ও অর্থবহ। প্রেরকের ঠিকানা, প্রাপকের নাম, তারিখ, এবং সঠিক সম্বোধন চিঠির সূচনা সুন্দর করে। মধ্যাংশে স্পষ্ট বার্তা এবং শেষাংশে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানানো প্রাপকের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সঠিক চিঠি লেখার নিয়ম চর্চা করলে এটি যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। প্রযুক্তির যুগে চিঠির আবেদন হয়তো কমেছে। তো কেমন লাগলো আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে ভালো লাগবে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন।

Mas-IT Team

হ্যালো, আমি জারীফ। আমি একজন স্টুডেন্ট। আমি মূলত শিক্ষা বিষয়ে লেখালেখি করে থাকি। আশাকরি আমি আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পারছি।