মাস্টার্সের দুটি কোর্স: নিয়মিত এবং প্রাইভেট – বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রিয় এবং সবার জন্য সুযোগ তৈরি করে। যদিও দুইটি কোর্সের পড়াশোনা এক রকম হলেও, তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এখানে মাস্টার্স নিয়মিত এবং প্রাইভেট কোর্সের পার্থক্য সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
মাস্টার্স নিয়মিত ও প্রাইভেটের পার্থক্যসমূহ
ভর্তি প্রক্রিয়া:
মাস্টার্স নিয়মিত কোর্সে ভর্তির জন্য মেধা তালিকায় স্থান পেতে হয়। এর মানে হল, যে ছাত্রছাত্রীদের উচ্চতর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল থাকে, তারা নিয়মিত কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। অন্যদিকে, মাস্টার্স প্রাইভেট কোর্সে অনলাইনে আবেদন করে ভর্তি হতে হয়। ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি কলেজে গিয়ে টাকার অংক, ছবি, সার্টিফিকেট এবং মার্কশীট জমা দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।
কোর্সের বিষয়:
মাস্টার্স প্রাইভেট কোর্সে কিছু বিষয় সীমাবদ্ধ। বিজ্ঞান বিষয়ক কোর্স যেমন বায়োলজি, রসায়ন ইত্যাদির প্রাইভেট কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় প্রাইভেট কোর্সে পড়ানো হয়। মাস্টার্স নিয়মিত কোর্সে এসব বিষয় সবসময় পড়ানো হয়, তবে কিছু বিজ্ঞান বিষয়ও এখানে উপলব্ধ থাকে।
ক্লাসের ব্যবস্থা:
নিয়মিত কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রতিটি বিষয় ও শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচী থাকে, যা নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করে। তবে প্রাইভেট কোর্সে ক্লাস করার প্রয়োজন নেই। প্রাইভেট শিক্ষার্থীরা চাকুরিজীবী বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক।
টার্ম পেপার ও পরিক্ষা:
মাস্টার্স নিয়মিত কোর্সে টার্ম-পেপার এবং মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) রয়েছে, যেখানে প্রতি টার্মে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট সংখ্যক পরীক্ষা দিতে হয়। প্রাইভেট কোর্সে টার্ম-পেপার থাকলেও মৌখিক পরীক্ষা থাকে। নিয়মিত কোর্সের শিক্ষার্থীদের টার্ম পেপার ৫০ নম্বরের এবং ভাইভা ৫০ নম্বরের হয়ে থাকে, যেখানে প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরের।
পরীক্ষার মূল্যায়ন:
নিয়মিত এবং প্রাইভেট উভয় ক্ষেত্রেই ইনকোর্স পরিক্ষা নিতে হয়। তবে, কিছু কলেজে ইনকোর্স পরীক্ষা নেয়া হয় না। ইনকোর্স পরীক্ষা ২০ নম্বরের এবং লিখিত পরীক্ষা ৮০ নম্বরের হয়। উভয় কোর্সের পরীক্ষার মান এবং পদ্ধতি একই থাকে। পরীক্ষার ফলাফল এবং পর্যালোচনাও একই সময়েই প্রকাশ হয়।
কোর্সের মেয়াদ:
মাস্টার্সের নিয়মিত এবং প্রাইভেট কোর্সের মেয়াদ এক (০১) বছর। তবে, প্রতিটি কোর্সের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকে তিন (০৩) বছর।
সার্টিফিকেটের মান:
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন যে, প্রাইভেট কোর্স থেকে মাস্টার্স শেষ করলে সার্টিফিকেটের মান কম হবে। কিন্তু বাস্তবে, নিয়মিত এবং প্রাইভেট কোর্সের সার্টিফিকেটের মান সমান। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সার্টিফিকেটে কোনো ধরনের আলাদা লেখা নেই যা কোর্সের ধরনকে নির্দেশ করে।
খরচ:
মাস্টার্স নিয়মিত কোর্সে ভর্তি হতে গেলে প্রায় ৩,০০০-১০,০০০ টাকা খরচ হতে পারে, যার মধ্যে ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি, বইয়ের খরচ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে। অপরদিকে, মাস্টার্স প্রাইভেট কোর্সে খরচ অনেক কম, প্রায় ১,১০০-২,০০০ টাকা। প্রাইভেট কোর্সের জন্য ফি এবং অন্যান্য খরচ অনেক কম।
ভর্তি সুযোগ:
মাস্টার্স নিয়মিত কোর্সে ভর্তির জন্য মেধা তালিকায় স্থান পেতে হয়, যার জন্য ভালো ফলাফল প্রয়োজন। তবে, মাস্টার্স প্রাইভেট কোর্সে ভর্তি হতে ২.২৫ পয়েন্ট বা ৪৫% নম্বর পেলেই ভর্তি নিশ্চিত হয়ে যায়।
ডিগ্রি অর্জন:
প্রাইভেট কোর্সে মাস্টার্স শেষ করার পর, সেই শিক্ষার্থী আর নিয়মিত মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হতে পারেন না। তবে, নিয়মিত কোর্স থেকে প্রাইভেট কোর্সে যেতে কোনো বাধা নেই। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবিধা।
মাস্টার্স নিয়মিত ও প্রাইভেটের সার্বিক পার্থক্য
বিষয় | নিয়মিত | প্রাইভেট |
---|---|---|
ভর্তি প্রক্রিয়া | মেধা তালিকায় স্থান পেতে হয় | অনলাইনে আবেদন, কলেজে ফি ও অন্যান্য কাগজপত্র জমা |
ক্লাসের ব্যবস্থা | ক্লাস করতে হয় | ক্লাসের প্রয়োজন নেই |
টার্ম পেপার | ৫০ নম্বরের | নেই |
মৌখিক পরীক্ষা | ৫০ নম্বরের | ১০০ নম্বরের |
ইনকোর্স পরীক্ষা | ২০ নম্বরের | ২০ নম্বরের |
লিখিত পরীক্ষা | ৮০ নম্বরের | ৮০ নম্বরের |
রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ | ৩ বছর | ৩ বছর |
মেয়াদ | ১ বছর | ১ বছর |
সার্টিফিকেটের মান | সমান | সমান |
খরচ | ৩,০০০-১০,০০০ টাকা | ১,১০০-২,০০০ টাকা |
মাস্টার্স নিয়মিত এবং প্রাইভেট কোর্সের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। তবে, দুটি কোর্সের সার্টিফিকেট এবং পরীক্ষার মান সমান। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুসারে, নিজেদের ব্যস্ততা এবং সুবিধা বিবেচনা করে যে কোনো একটি কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। প্রাইভেট কোর্স চাকুরিজীবীদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক, যেহেতু এখানে ক্লাস করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, নিয়মিত কোর্সে ভর্তির জন্য মেধা তালিকায় স্থান পেতে হয় এবং এই কোর্সের পড়াশোনা একেবারে একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী চলে। আপনার প্রয়োজন এবং জীবনযাত্রার ওপর ভিত্তি করে, আপনি সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোন কোর্সটি আপনার জন্য উপযুক্ত।