কে কবে আমেরিকা আবিষ্কার করেন
আমেরিকার আবিষ্কার একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে, এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে আমেরিকা আবিষ্কার একদিনে হয়নি। ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে যে ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর ক্রিস্টোফার কলম্বাস ইউরোপ থেকে আমেরিকা পৌঁছান। এটি আধুনিক ইতিহাসে “আমেরিকা আবিষ্কার” নামে পরিচিত। কলম্বাস একটি স্প্যানিশ অভিযানের অংশ হিসেবে পাড়ি জমান। তার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের নৌপথ আবিষ্কার।
তবে, আমেরিকা আবিষ্কার করার আগে, আমেরিকার আদিবাসীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই ভূখণ্ডে বসবাস করছিলেন। ইউরোপীয়রা এটি “নতুন পৃথিবী” হিসেবে আবিষ্কার করলেও এটি অনেক পুরাতন সভ্যতার জন্মভূমি। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারণ এটি ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।আজকের এই আর্টিকেল এ আমরা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিহাস সম্পর্কে খুব তাড়াতাড়ি জানার চেষ্টা করবো।
আমেরিকার আবিষ্কারক (কলম্বাস) কে ছিলেন?
ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন একজন ইতালীয় নাবিক এবং অভিযাত্রী। তার জন্ম ১৪৫১ সালে জেনোয়া শহরে। শৈশব থেকেই তিনি সমুদ্রযাত্রা সম্পর্কে গভীর আগ্রহী ছিলেন। তার নৌযাত্রার দক্ষতা এবং সাহসিকতার জন্য তিনি বিভিন্ন অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
কলম্বাস বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবী গোলাকার, এবং পশ্চিম দিক দিয়ে পূর্বের দেশ ভারতে পৌঁছানো সম্ভব। এই ধারণা নিয়েই তিনি সমুদ্র অভিযানের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন। স্পেনের রানী ইসাবেলার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি একটি অভিযান পরিচালনার সুযোগ পান। । তার এই আবিষ্কার বিশ্বের ভূরাজনৈতিক ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলে।
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিহাস
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার শুরু হয় ১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট। তিনি তিনটি জাহাজ নিয়ে স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করেন। তার এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল পশ্চিম দিক দিয়ে ভারত পৌঁছানো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তিনি এসে পৌঁছান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এটি ভারতবর্ষেরই একটি অংশ।
কলম্বাসের এই যাত্রায় তিনি তিনটি প্রধান জাহাজ ব্যবহার করেছিলেন— সান্তা মারিয়া, নিনা এবং পিন্টা। তার নেতৃত্বে এই অভিযান নতুন এক পৃথিবীর দরজা খুলে দেয়। ১২ অক্টোবর ১৪৯২ সালে, তিনি বাহামা দ্বীপপুঞ্জের এক দ্বীপে পৌঁছান, যাকে তিনি “সান স্যালভাদর” নাম দেন। যদিও কলম্বাস কখনো আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পা রাখেননি, তার এই অভিযানের মাধ্যমেই ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের সূচনা হয়।
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের গল্প
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের গল্প সাহস, সংগ্রাম, এবং নতুন জগতের সন্ধানের গল্প। তিনি যাত্রা শুরুর আগে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। অনেকেই তার পরিকল্পনাকে অবাস্তব বলে মনে করতেন।
সমুদ্রযাত্রার সময় কলম্বাস এবং তার সঙ্গীদের অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবের কারণে নাবিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। কিন্তু কলম্বাস তার দৃঢ় বিশ্বাস এবং নেতৃত্বগুণ দিয়ে দলকে একত্রিত রাখতে সক্ষম হন।
তার এই যাত্রা শুধু ভৌগোলিক সীমারেখাকে বদলায়নি, বরং সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং বাণিজ্যের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিহাস একটি অমর কাহিনি যা যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
আমেরিকা কিভাবে আবিষ্কার হয়?
সরাসরি যুক্ত তার দিক নির্দেশনা এবং সমুদ্রপথ অনুসন্ধানের সাথে। স্পেনের সমর্থনে এই অভিযান পরিচালিত হয়, এবং এর উদ্দেশ্য ছিল নতুন বাণিজ্যপথ আবিষ্কার।
কলম্বাস যখন সান্তা মারিয়া জাহাজে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছান, তখন এটি ইউরোপীয়দের জন্য আমেরিকার প্রথম পরিচিতি। যদিও আমেরিকার আদিবাসীরা হাজার হাজার বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বসবাস করছিলেন, কলম্বাসের অভিযান একে ইউরোপীয়দের মানচিত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করে।
কলম্বাসের জাহাজের নাম কি?
কলম্বাসের অভিযানে ব্যবহৃত তিনটি বিখ্যাত জাহাজের নাম ছিল সান্তা মারিয়া, নিনা, এবং পিন্টা। সান্তা মারিয়া ছিল প্রধান জাহাজ এবং কলম্বাস নিজে এটি পরিচালনা করতেন।
নিনা এবং পিন্টা তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের হলেও এই জাহাজগুলো অভিযানের জন্য অপরিহার্য ছিল। সান্তা মারিয়া পরবর্তীতে এক দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়। কলম্বাসের জাহাজগুলোর নাম তার অভিযানের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
আমেরিকার নামকরণ করেন কে?
কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করলেও, এই মহাদেশের নামকরণ তার নামে হয়নি। আমেরিকার নামকরণ করা হয় ইতালীয় ভূগোলবিদ আমেরিগো ভেসপুচি-র নামানুসারে।
আমেরিগো ভেসপুচি বিশ্বাস করতেন যে কলম্বাস যে ভূমিতে পৌঁছেছিলেন, সেটি ভারত নয় বরং সম্পূর্ণ নতুন একটি মহাদেশ। এই বিশ্বাসকে ভিত্তি করেই ১৫০৭ সালে জার্মান মানচিত্রশিল্পী মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলার নতুন এই মহাদেশের নাম রাখেন “আমেরিকা”।
উপসংহার
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিহাস কেবল একটি অভিযান নয়, এটি মানব সভ্যতার নতুন যুগের সূচনা। তার যাত্রা বিশ্বমানচিত্রে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। যদিও এই আবিষ্কার বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, এটি ইতিহাসের এক অমূল্য অংশ। কলম্বাসের দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়।